নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের মুসলিম বাসিন্দারা মনে করেন ‘ইসলামোফোবিয়া’ (ইসলামবিদ্বেষ) সমাজে স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিচ্ছে। তাদের অনেককে বৈষম্য ও 'হেইট ক্রাইমের' (ঘৃণাজনিত অপরাধ) শিকার হতে হচ্ছে ধর্মীয় পোশাক ও নামের কারণে। আমস্টারডাম পৌর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত একটি গবেষণার বরাতে রোববার এসব তথ্য জানায় ইংরেজি ভাষার পত্রিকা এনএল টাইমস।
রয়টার্স আর্কাইভ ফটো। |
গবেষণাটিতে উত্তরদাতারা জানিয়েছেন শহরটিতে তারা নিয়মিতই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আর ইসলামবিদ্বেষ স্বাভাবিকীকরণে জ্বালানি হয়ে কাজ করছে রাজনীতির চরম ডানপন্থী ধারার ক্রমবর্ধমান প্রভাব। তারা বলছেন এতে ভূমিকা রেখেছে সংবাদ মাধ্যমও। সেখানে মুসলিমদেরকে যেভাবে তুলে ধরা হয়, তা তাদের আত্মপরিচয়ে নেতিবাচকভাব প্রভাব ফেলছে।
উত্তরদাতাদের কেউ কেউ মনে করেন এতে মুসলিম সম্প্রদায়েরও ভূমিকা আছে। তারা বলছেন অস্থিরতা সৃষ্টিকারী কিছু ধর্মপ্রচারক আমস্টারডামের মুসলিম ও ধর্মনিরপেক্ষদের মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে সমাজের ক্ষতি করছে।
হেট প্যারোল নামের স্থানীয় একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে এনএল টাইমস বলছে, "তারা (মুসলিমরা) জানিয়েছেন ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তারা ইন্টার্নশিপ পান না। হিজাব পরার কারণে তাদেরকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় এবং তাদের উপর ঘৃণাজনিত আক্রমণ করা হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
গবেষকদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলছে অধিকাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ইসলাম্বিদ্বেষী আক্রমণের স্বাভাবিকীকরণ ছিল তাদের জীবনে একটি বড় সমস্যা। তবে এর বিরুদ্ধে কিছু করতে না পেরে একটা পর্যায়ে তারা এটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শুরু করেন।
স্কুলেও শিশু ও কিশোররা ইসলামবিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হচ্ছে। গবেষণাটিতে উত্তরদাতাদের প্রায় সবাই জানিয়েছেন শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীদের তুলনায় ইন্টার্নশিপ পাওয়া তাদের জন্য বেশি কঠিন। এই ধারা চাকুরীর বাজারেও অব্যাহত আছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয় উত্তরদাতাদের অনেককেই চাকুরিতে নেওয়া হয় না তাদের উপনাম ও পারিবারিক পরিচয়ের কারণে।
সাক্ষাৎকারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় যেমন তাদের লিঙ্গ পরিচয়, সন্ত্রাসবাদ, অথবা নেদারল্যান্ডসের প্রতি তাদের আনুগত্য সম্পর্কে।
এসব ব্যাপারে কারো নিকট নালিশ করলে বলা হয় তারা ঠাট্টা বুঝেনা অথবা বলা হয় বিশেষ সুবিধা বা সহানূভূতি আদায় করতে তারা বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ তুলছে।
যারা মাথায় স্কার্ফ পরেন, তারা অভিযোগ করেন তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বিভিন্ন নামে ডাকে এবং তাদের কারও কারও উপর থুতু নিক্ষেপ করে। অনেক মুসলিম মনে করেন গণপরিবহন ও দোকানপাটে তাদেরকে অবজ্ঞা করা হয় অথবা তাদের পরিধেয়ের কারণে স্টাফরা এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে।
এনএল টাইমস পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয় এসব বৈষম্যের জন্য নিয়োগকারী ও নিয়োগ প্রতিষ্ঠানসমূহকে দায়ী করতে আমস্টারডাম পৌর কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকগণ।
হামবুর্গ ভিত্তিক ওয়েবসাইট স্ট্যাটাসটিকা'র তথ্যানুসারে নেদারল্যান্ডসের মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ মুসলিম।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড