টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটিং কী?
ব্লগে পোস্ট, আর্টিকেল, ই-বুক, পণ্যের রিভিও ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়িকা আকারে কন্টেন্ট বা লেখা তৈরি করাকে কন্টেন্ট রাইটিং বলা হয় এবং যে প্রযুক্তি বিষয়ে এসব কন্টেন্ট লিখে থাকে, তাকে বলা হয় টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটার।
এমন কন্টেন্ট লেখার জন্য রিসার্চ করা ও কন্টেন্টে কিওয়ার্ড (প্রধান প্রধান শব্দ) ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। আর কোন ব্রান্ডের জন্য লিখলে সেটার স্টাইল সম্পর্কেও অবগত থাকতে হবে।
কন্টেন্ট রাইটিংয়ে ভালো করতে হলে প্রযুক্তির জটিল বিষয়সমূকে সহজ ভাষায় বুঝাতে হবে, পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্ত আকারে লিখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় শব্দ বা বাক্য পরিহার করতে হবে।
এ বিষয়ে ধারণা পেতে সফটওয়্যার, অন্যান্য পণ্য, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে প্রচুর আর্টিকেল ও টিউটোরিয়াল রয়েছে এমনসব ব্লগ, এবং প্রযুক্তি বিষয়ক পত্র-পত্রিকা ভিজিট করতে পারেন।
টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটার এবং টেকনিক্যাল রাইটারের মধ্যে পার্থক্য
এতক্ষণ জেনেছেন টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটিং ও রাইটার সম্পর্কে। এখন জানবো টেকনিক্যাল রাইটার সম্পর্কে।
একজন টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটার সাধারণত কোনো ব্লগের জন্য লিখে থাকেন বা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। অপরদিকে একজন টেকনিক্যাল রাইটার কোনো কোম্পানির জন্য ডকুমেন্ট, ব্যবহার বিধি, নির্দেশনা, ও পণ্যের বিবরণী তৈরি করেন। সাধারণত প্রথম জনের বাৎসরিক বেতন হয়ে থাকে প্রায় ৫২ হাজার ডলার এবং দ্বিতীয় জনের ৭২ হাজার ডলার।
তিন শীর্ষ দক্ষতা, যা টেক কন্টেন্ট রাইটারদের জন্য প্রয়োজন
১। লেখালেখিতে দৃঢ় দক্ষতা
লেখালেখিতে দৃঢ় দক্ষতা থাকতে হবে। আর এজন্য রাইটিং এর উপর কিছু অনলাইন কোর্স করে নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য ব্যাকরণগত ভুল ঠিক করার পাশাপাশি আরও কিছু কৌশল জেনে নিতে হবে, যেমন দৃষ্টি আকর্ষক শিরোনাম ব্যবহার করা, ও লেখায় সাবলীল উপস্থাপনা।
২। জটিল বিষয়সমূহ রিচার্স করা
রিসার্চ কন্টেন্ট লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। রিচার্স ভালো না হলে কন্টেন্টও নিম্মমানের হবে। এতে পাঠক ও ক্লায়েন্ট হতাশ হবে। সুতরাং, কোনো কন্টেন্ট লেখার আগে ভালোভাবে রিসার্চ করে নেওয়া জরুরি।
রিসার্চের সর্বোত্তম উপায়সমূহের একটি হল গুগলে কোনো টপিক সার্চ দেওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি কোথা থেকে নিচ্ছেন, সেটি জানা অর্থাৎ ব্লগ/ওয়েবসাইটটি পরিচিত ও প্রসিদ্ধ কিনা। সার্চ রেজাল্টের উপরের দিকেই খুঁজে নেবেন ডোমেইন অথরিটি, দেখে নেবেন ব্লগটির মাসিক ভিসিটর কত।
আপনি হয়তো ভাবছেন প্রথম অবস্থায় এত লেখা কোথায় পাবেন। যতটা ভাবছেন, কাজটি ততটা কঠিন নয়। নিচে দেওয়া তিনটি ক্রোম এক্সেনটেন এর যেকোন একটি ডাউনলোড করুন:
- কিওয়ার্ড সার্ফার
- উবারসাজেস্ট
- মোজবার
ডাউনলোড হয়ে গেলে এক্সেনটেনটি ওপেন করুন। সেখানে দেখতে পাবেন ওয়েবসাইটসমূহের বিশ্লেষণাত্মক বিবরণ - ডোমেইন অথরিটি, মাসিক ভিসিটর, লিংককৃত পেজে কিওয়ার্ডের সংখ্যা, মোট শব্দ সংখ্যা, পেজের বৈশিষ্ট্য, এবং স্যোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মে মোট শেয়ার সংখ্যা। অর্থাৎ এগুলো দেখেই বুঝতে পারবেন একটা ব্লগ থেকে কি পরিমাণ তথ্য আপনি পাচ্ছেন।
৩। শিল্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ
গুগল থেকে সার্চ করা ছাড়াও বিশদ আকারে কন্টেন্ট তৈরি করতে চাইলে, যা কোথাও নেই, তাহলে আপনার প্রয়োজন হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া। তারা হতে পারে প্রকৌশলী, গবেষক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রমূখ।
তবে এতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে এবং যোগাযোগে দক্ষতার দরকার হবে। আপনি যদি শুধু আপওয়ার্ক, ফাইভার, অথবা ক্রেইগসলিস্টে পড়ে না থেকে নেতৃস্থানীয় কোম্পানিসমূহে উচ্চ বেতনে টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটার হতে চান, তাহলে আপনাকে এই দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, আপনি যদি কোনো টেক নিউজ ব্লগে কাজ করেন, তাহলেও এটির দরকার হবে।
সুতরাং এমনভাবে ইমেইল লিখুন, যাতে জবাব পাওয়া যায় এবং সঠিক উপায়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগ ও তার সাক্ষাৎকার নিন।
টেকনিক্যাল রাইটিংয়ে আপনার প্রবেশ
টেক কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে আবশ্যক বিষয়সমূহ জানার পর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনো কোম্পানিতে কি হিসেবে কাজ করবেন, চুক্তিবদ্ধ/ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নাকি পূর্ণকালীন কর্মী।
একজন ফ্রিল্যান্স টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য সাংবাদিকতা ডিগ্রি অথবা প্রযুক্তি শিল্পে অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি নয়। তবে থাকলে বাড়তি সুবিধা দেবে। উপরে যেসব বিষয় আলোচনা করেছি, সেসবে দক্ষতা থাকাই যথেষ্ঠ।
আজকেই একজন টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে আপনার যাত্রা শুরু করতে কিছু উপায় নিম্মে প্রদত্ত হলো:
-অনলাইন বা ইউনিভার্সিটি কোর্সসমূহে ভর্তি হয়ে যান। র্যাটিং অনুযায়ী কয়েকটি কোর্সের নাম দেওয়া হলো:
- গুড উইথ ওয়ার্ডস: রাইটিং ও এডিটিং। মিশিগান ইউনিভার্সিটি
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি
- স্টোরিটেলিং এ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্সিং: কমিউনিকেট উইদ ইমপ্যাক্ট। ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটি.
- পেশাজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ: ভালো ক্লায়েন্ট বা প্রসিদ্ধ কোন প্রতিষ্ঠানে জব পেতে চাইলে এটা দিয়ে শুরু করা উত্তম হবে।
- টেক রাইটিংয়ের উপর একটি পোর্টফোলিও (দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিবরণ) তৈরি করুন: এটি সহজেই করতে মিডিয়াম এ ব্লগ শুরু করতে পারেন। এটি ফ্রী, এবং আপনার নিয়োগকর্তারা দেখে বুঝবে আপনি জানেন অনলাইন পাঠকদের জন্য কিভাবে লিখতে হয়। অনলাইন পোর্টফোলিও তৈরি করতে এই সাইটগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
- চাকুরির জন্য আবেদন: আপনার অনুসন্ধান শুরু করার জন্য ইন্ডিড, মন্সটার, ফ্লেক্সজবস, ক্যারিয়ার বিল্ডার, নেক্সট, লিঙ্কডিন প্লাটফর্মসমূহ দারুণ স্থান।
টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটিং এ শুরু করুন ক্যারিয়ার
অন্য সবকিছুর মতই এ জন্য দরকার লেগে থাকা এবং পর্যাপ্ত সময় দেওয়া।
সুতরাং, আপনি যদি প্রযুক্তিপ্রেমি, এবং প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে মানুষের জন্য সহজতর করতে দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে এটাই আপনার সুযোগ। এই অনুচ্ছেদে যেসব দক্ষতা আলোচনা করা হয়েছে, সেসব শাণিত করুন, কোনো বিষয়কে গভীরভাবে ভাবুন, এবং আপনার নতুন যাত্রা শুরু করুন টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটিং এ।
সূত্র: কানাডার কুইবেক ভিত্তিক প্রযুক্তি সাইট এমইউও